বিশ্বখ্যাত টেকনোলজি কোম্পানি মাইক্রোসফটের সহ-প্রতিষ্ঠাতা বিল গেটস। দীর্ঘদিন বিশ্বের শীর্ষ ধনী থাকার বদৌলতে তার নাম ছেলে-বুড়ো থেকে বিশ্বের সকল প্রান্তের প্রায় সকলেই জানে। সেই সাথে বিল এন্ড মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে বিশ্বজুড়ে জনহিতকর কাজেও তিনি রেখে চলেছেন গুরুত্বপূর্ণ অবদান।
জীবন্ত এ কিংবদন্তীর ৫টি উপদেশই চলুন এখন জেনে নেয়া যাক, যা জীবন, ব্যবসা, সমৃদ্ধি, পরিকল্পনা সবকিছু সম্পর্কেই আপনার দৃষ্টিভঙ্গি বদলে দেবে। এমনকি এটা হতে পারে আপনার ভবিষ্যতে জীবন বদলে দেবার চাবিকাঠিও।
১. অন্যকে সাহায্যের মাঝেই সম্পদের প্রকৃত মূল্য নিহিত
অনেকের কাছে জীবনে প্রচুর টাকা কামানোই সফলতার একমাত্র নির্দেশক। ধন-দৌলত হয়তো আপনার জীবনের চাহিদা হতে পারে, কিন্তু সেটাকে চূড়ান্ত লক্ষ্য বানিয়ে ফেললে যে সেই জীবন আর জীবন থাকে না, সে কথা বলাই বাহুল্য।
এ কথা অনুধাবন করেন বিল গেটস নিজেও। প্রায় ৯৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের এ মালিক তাই বিশ্বজুড়ে আর্তমানবতার সাহায্যে এগিয়ে গিয়ে এবং তাদের আর্থিক অবস্থার উন্নয়নের মাঝেই জীবনের সুখ খুঁজে পেয়েছেন।
তার ভাষ্যমতে,
“আমি খুবই সৌভাগ্যবান। এজন্য আমি চেষ্টা করি বিশ্ব থেকে বৈষম্য দূর করতে। এবং এটা একধরনের ধর্মীয় বিশ্বাসও। অন্ততপক্ষে, এটা একধরনের মূল্যবোধ।”
২০০০ সালে প্রতিষ্ঠিত বিল এন্ড মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশনের একজন কো-চেয়ারম্যান হলেন বিল গেটস। এ ফাউন্ডেশনটি বিশ্বজুড়ে স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতকরণ, দারিদ্র্য দূরীকরণ এবং শিক্ষার বিস্তার নিয়ে কাজ করে যাচ্ছে। ২০১৩ সালে তিনি এতে ২৮ বিলিয়ন ডলার দান করেছিলেন। শুধু এটাই নয়, এর আগে তিনি এই ফাউন্ডেশনে নিজের সম্পদের ৯৫% দান করার ঘোষণাও করে গেছেন।
২. সাফল্য এবং ব্যর্থতা দুটোই গুরুত্বপূর্ণ
মাইক্রোসফটের চলার শুরুর দিকে অনেক কঠিন পথ অতিক্রম করতে হয়েছে বিল গেটসকে। অনেক ভুল করেছেন তিনি। সেসব ভুল থেকে শিক্ষা নিয়েছেন। অনেকবার চলার পথের বাধা-বিঘ্ন তার পথরোধ করতে এসেছে। কিন্তু তবুও হাল ছেড়ে না দিয়ে তিনি দাঁতে দাঁত কামড়ে নিজের সাথে নিজের লড়াই চালিয়ে গেছেন। ব্যর্থতা আসলেও পড়ে না গিয়ে আবার উঠে দাঁড়িয়েছেন, ব্যর্থতাকে করে নিয়েছেন নিজের অনুপ্রেরণার উৎস।
আমাদের মাঝে অনেকেই সাফল্যের আনন্দে উদ্বেলিত হই। অন্যদিকে ব্যর্থতার কষ্টে নিজেকে মূল্যহীন ভাবতে শুরু করি। কিন্তু এ সম্পর্কে বিল গেটসের মতামত হলো,
“সাফল্যকে উদযাপন করা ভালো। কিন্তু ব্যর্থতা থেকে শিক্ষাগ্রহণ করা এর থেকেও বেশি গুরুত্বপূর্ণ।”
৩. সাফল্যের আনন্দে আত্মহারা হলে পথভ্রষ্ট হবার সম্ভাবনা থাকে
বিল গেটসের জীবনটা একবার ভালো করে দেখুন। মাইক্রোসফটের মতো বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় একটি কোম্পানির শীর্ষপদে তিনি অধিষ্ঠিত ছিলেন দীর্ঘদিন ধরে। বিগত ২৩ বছরে ১৮ বার তিনি নির্বাচিত হয়েছিলেন বিশ্বের সর্বোচ্চ ধনী ব্যক্তি হিসেবে। কিন্তু তবুও তার সাফল্যের ক্ষুধা কমেনি। প্রতিনিয়ত তিনি সফল হয়েছেন, এরপর সফলতার নতুন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে আবার সেই লক্ষ্যের পেছনে ছুটেছেন।
একজন সত্যিকারের সাফল্যপ্রত্যাশী ব্যক্তির আসলে এমনটাই হওয়া দরকার। এ প্রসঙ্গে বিল গেটস বলেন,
“আমি যদি আসলেই ফিনিশিং লাইনের কোনো লক্ষ্যমাত্রা স্থির করতাম, তোমার কি মনে হয় আমি সেটা বহু বছর আগেই ছুঁয়ে ফেলতে পারতাম না?”
এ উক্তিটি নিঃসন্দেহে সাফল্যের জন্য তার নিরন্তর ক্ষুধারই পরিচায়ক।
৪. অর্থের চেয়ে সময় মূল্যবান
আমাদের জীবন একটাই। একমাত্র এ জীবনের যে মুহূর্তগুলো চলে যাচ্ছে, সেগুলোকে আর কোনোভাবেই ফিরে পাওয়া সম্ভব না। এজন্যই সময়ের ব্যাপারে আমাদের আরো যত্নবান হওয়া প্রয়োজন।
সময়ের অপচয় করা যাবে না কোনোভাবেই। আপনার হাতে একগাদা কাজ জমা আছে? বেছে নিন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজটি। সবার আগে সেটিই শেষ করুন। কারণ সময়ের পর সেটা করতে যত কষ্টই করা হোক না কেন, তার সবটাই মূল্যহীন। সেই সাথে সময় দিন আপনার কাছের মানুষগুলোকে। অর্থ হয়তো অনেক কামাতে পারবেন, কিন্তু কাছের মানুষগুলো যদি দূরে সরে যায়, তবে শত-সহস্র-লক্ষাধিক টাকা খরচ করেও সেই সম্পর্কে আর জোড়া লাগাতে পারবেন না।
বিল গেটসের মতো বিজনেস ম্যাগনেটও তাই বলতে বাধ্য হয়েছেন,
“আপনার কাছে কত টাকা আছে সেটা কোনো বিষয় না, বিষয় হলো আপনি কোনোদিনই সময়কে কিনতে পারবেন না।”
৫. এখনই শুরু করুন
আপনার মাথায় কোনো আইডিয়া কিলবিল করছে কি? তাহলে সেটা বাস্তবায়নের জন্য যা যা করা দরকার তা এখনই শুরু করে দিন। কালকের জন্য কোনো কাজ ফেলে রাখবেন না। কারণ আজ যে কাজটাকে ‘বাকি’র খাতায় আপনি রেখে দিচ্ছেন, সেটার মাধ্যমে নিজের অজান্তেই আপনি ‘ফাঁকি’র ফাঁদে পড়ে যাচ্ছেন।
স্বপ্নটা আপনার। সেটা ছুঁতে আপনাকেই ছুটতে হবে। আর সেটা এখনই, এই মুহূর্তেই।
সঠিক সময়ে সঠিক কাজ করার গুরুত্ব বোঝাতে গিয়ে বিল গেটস বলেছেন,
“আপনি যদি আপনার স্বপ্নকে গড়তে না পারেন, তাহলে অন্য কেউ এসে তাদের স্বপ্নকে গড়তে আপনাকে কাজে লাগাবে।”