চাকরির ইন্টারভিউতে নিজেকে সুন্দরভাবে উপস্থাপন করাটা ভীষণ জরুরি। আপনার চাকরি পাওয়া কিন্তু অনেকটাই আপনার প্রতি নির্বাচকদের ইম্প্রেশনের উপরই নির্ভর করে। তবে অধিকাংশ মানুষই উপযুক্ত দিকনির্দেশনা না পাওয়ায় নির্বাচকদের সামনে নিজেকে সুন্দরভাবে উপস্থাপন করতে ব্যর্থ হয়।
এই লেখাটি মূলত তাদের জন্যই। জব ইন্টারভিউ দেয়ার সময় আপনাকে কিছু ব্যাপার অবশ্যই মাথায় রাখতে হবে।
১. প্রথম পাঁচ মিনিটেই নজর কাড়াতে হবে
কিছু গবেষণা থেকে জানা যায়, নির্বাচকরা প্রশ্ন করার প্রথম পাঁচ মিনিটেই প্রার্থীকে নিয়ে তাদের মতামত ঠিক করে ফেলেন। এরপর প্রার্থীকে নির্বাচন করতে তারা আগ্রহী কি না সে অনুসারে ইন্টারভিউ আগান। তাই একদম শুরুতেই নির্বাচকদের মনোযোগ আপনার দিকে আনতে হবে। এজন্য কোম্পানি এবং আপনার আবেদনকৃত পদটি নিয়ে ইতিবাচক মন্তব্য দিয়েই শুরু করুন কথোপকথন।
২. জেনে নিন আপনি কোথায় যাচ্ছেন
প্রায়ই প্রশ্নকর্তারা তাদের কোম্পানি সম্পর্কে প্রার্থীর মতামত জানতে চান। তাই যেখানে চাকরির ইন্টারভিউ দিতে যাচ্ছেন সেই কোম্পানি কিংবা ইন্ডাস্ট্রি সম্পর্কে আগে থেকে জেনে নেয়া ভালো। সেক্ষেত্রে কোম্পানির ওয়েবসাইটটিতে একবার ঢুঁ মেরে আসতে পারেন। তাছাড়া তাদের কোম্পানিকে নিয়ে কোনো আর্টিকেল প্রকাশিত হয়েছে কি না সেটাও অনলাইনে একবার দেখে নিতে পারেন।
৩. চাকরির পদ সম্পর্কিত তথ্য
আপনি যে পদের জন্য আবেদন করেছেন সেটা সম্পর্কেও আপনাকে জিজ্ঞেস করা হতে পারে। তাই পদটি সম্পর্কিত তথ্য এবং আপনি কেন নিজেকে ঐ পদের উপযুক্ত মনে করেন সে বিষয়ে একটি উত্তর মনে মনে মনে ঠিক করে নিন।
৪. কিছু কমন প্রশ্নের উত্তর
সব চাকরির ইন্টারভিউতেই প্রশ্নকর্তারা কিছু কমন প্রশ্ন করেন। এই প্রশ্নগুলোর উত্তর বাসা থেকেই মনে মনে তৈরি করে নিয়ে যাওয়া ভালো। ফলে ঝটপট সুন্দর উত্তর দেয়া সম্ভব হয়। মোটামুটি সব ইন্টারভিউয়ের সাজেশনমূলক বইগুলোতেই আপনি সেই কমন প্রশ্নগুলোর লিস্ট পাবেন। প্রশ্নগুলো পড়ুন এবং মনে মনে নিজের উত্তরটি তৈরি করুন।
৫. অযৌক্তিক/ অপ্রাসঙ্গিক প্রশ্নের জন্য তৈরী হোন
আপনার সততা এবং উপস্থিত বুদ্ধি পরীক্ষা করার জন্য প্রশ্নকর্তারা আপনাকে অনেক বিব্রতকর প্রশ্ন করতে পারেন। সেক্ষেত্রে একটু সময় নিয়ে চিন্তা করে উত্তর দিন। আপনি যেকোনো পরিস্থিতি সামালাতে পারেন কি না সেটা দেখার জন্য নির্বাচকরা আপনার সাথে রুক্ষ আচরণও করতে পারেন। এরকমটা হলে ঘাবড়ে না গিয়ে মাথা ঠান্ডা রেখে উত্তর দিন।
৬. নিজের সম্পর্কে কী বলবেন
চাকরির ইন্টারভিউতে আপনাকে নিজের সম্পর্কে কিছু বলার জন্য বলতে পারে। নিজের সম্পর্কে বলার সময় চেষ্টা করবেন বক্তব্য যেন বেশি ছোট কিংবা বড় না হয়। আপনার যেসব বিষয়ে দক্ষতা আবেদনকৃত পদটির সাথে বেশি মানানসই সেগুলোতে প্রাধান্য দিন। আর এজন্য আপনাকে ইন্টারভিউ দিতে যাওয়ার আগে পদটি নিয়ে অনুসন্ধান করতে হবে। জেনে নিন নির্বাচকরা কী কী গুণের উপর জোর দিচ্ছেন। সে অনুযায়ী নিজের সম্পর্কে বলার জন্য একটি বক্তব্য আগে থেকেই তৈরি করে রাখুন।
৭. বক্তব্য উপস্থাপনা
আপনার বক্তব্য নির্বাচকদের ভালো লাগবে কি না তা অনেকখানি আপনার বক্তব্য উপস্থাপনার উপরেও নির্ভর করে। অনেকেই বক্তব্য প্রদানের সময় অনেক নার্ভাস হয়ে পড়েন কিংবা গলা কাঁপে। এই ব্যাপারগুলো নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। তাই এগুলো পরিহার করতে হবে। আর এজন্য মানুষের সাথে বেশি বেশি কথা বলা প্রয়োজন। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজে নিজে কথা বলার চর্চা করুন। তাহলেই এই সমস্যাগুলো কাটিয়ে উঠতে পারবেন।
৮. রিল্যাক্স
আপনি যথেষ্ট ভালোভাবে প্রস্তুতি নিয়েছেন ইন্টারভিউয়ের জন্য। তাই যথাসম্ভব নির্ভার থাকুন। লম্বা একটি শ্বাস নিন এবং ইন্টারভিউ দেয়ার জন্য কক্ষে প্রবেশ করুন। একটুখানি নার্ভাস হয়ে পড়লে চিন্তার কিছু নেই। বরং এতে নির্বাচকরা বুঝতে পারবেন আপনি চাকরিটা পেতে ইচ্ছুক।