রাশিয়ান ফেডারেশন, অন্যান্য বিষয়ের দিক থেকে ততটা আকর্ষণীয় না হলেও, মেডিকেল শিক্ষার দিক থেকে এটি নজর কেড়েছে সমগ্র বিশ্বের। ইউরোপের মেডিকেল শিক্ষার অন্যতম কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছে রাশিয়া, বিশেষ করে এর মেডিকেল স্কুলগুলোর অত্যাধুনিক প্রযুক্তি এবং সুযোগ-সুবিধা বিদেশি ছাত্রদের জন্য তাদের মেডিকেল ক্যারিয়ারের নতুন দুয়ার খুলে দিয়েছে। তাছাড়া রাশিয়ার ভিন্ন ধাঁচের মেডিকেল শিক্ষা পদ্ধতি একে অন্য যেকোনো দেশের মেডিকেল শিক্ষা থেকে আলাদা করে দিয়েছে।
সুযোগ-সুবিধার পাশাপাশি রাশিয়ার মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর খরচও ইউরোপ, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য কিংবা অন্যান্য উন্নত দেশের তুলনায় অনেক কম। রাশিয়ার সরকার বিভিন্ন ধরনের ভর্তুকি দিয়ে মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে অবকাঠামোর উন্নয়ন থেকে শুরু করে সবচেয়ে আধুনিক প্রযুক্তি ছাত্রদের ব্যবহারের সুযোগ করে দিচ্ছে তো বটেই, সাথে খুবই কম খরচে উন্নত আবাসিক ব্যবস্থাও তৈরি করে রেখেছে। অনেক বছর ধরেই রাশিয়ার মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়গুলো পৃথিবীর সেরা মেডিকেল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর শীর্ষস্থান দখল করে রেখেছে। তাছাড়া বই এবং অন্যান্য শিক্ষাসামগ্রীও বেশ কিছু ভাষায় অনুবাদ করা হয়ে থাকে, যাতে বিশ্বের অন্যান্য প্রান্ত থেকে আসা ছাত্রদের ভাষাগত জটিলতায় না পড়তে হয়।
ইউনেস্কো এবং ওয়ার্ল্ড হেলথ অর্গানাইজেশনের মতো আন্তর্জাতিক সংস্থা দ্বারা স্বীকৃত রাশিয়ার এই মেডিকেল ডিগ্রিগুলো, ফলে যেকোনো দেশেই এই ডিগ্রি নিয়ে ক্যারিয়ার গড়া যাবে।
আইইএলটিএস বা টোয়েফলের মতো টেস্টও প্রয়োজন হবে না রাশিয়ার মেডিকেল কলেজগুলোতে ভর্তি হওয়ার জন্য। এছাড়াও বিভিন্ন দেশের মেডিকেল শিক্ষার্থীরা এখানে ভিড় জমানোর ফলে রাশিয়ায় একটি মাল্টি-কালচারাল পরিবেশ গড়ে উঠেছে। প্রতিবছরই বিশ্বের অন্যান্য দেশের মেডিকেল শিক্ষাকে পর্যবেক্ষণ করে রাশিয়ার মেডিকেল কারিকুলাম আরও উন্নত করা হয় এবং প্রতিনিয়ত এর আন্তর্জাতিক মান বজায় রাখার চেষ্টা করা হয়। অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত মেডিকেল সম্পর্কিত বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সেমিনার এবং কনফারেন্সেও অংশগ্রহণের সুযোগ থাকে বিদেশি ছাত্রদের জন্য।
মেডিকেল কোর্সের সময়সীমা
রাশিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে জেনারেল মেডিসিন, ডেন্টাল এবং স্পোর্টস মেডিসিনের উপর এমডি (ডক্টর অফ মেডিসিন) ডিগ্রি দেওয়া হয়। ডিগ্রিগুলোর সময়সীমা নির্ভর করে কোন ভাষায় পড়াশোনা করা হবে তার উপর। যেমন: যদি রুশ ভাষায় কেউ পড়াশোনা করতে চায়, তবে তাকে প্রথমে ১ বছর অতিরিক্ত ভাষার কোর্স করে নিতে হবে। অন্যদিকে ইংরেজি ভাষায় পড়াশোনা করতে চাইলে তার এই অতিরিক্ত কোর্সের প্রয়োজন পড়বে না, যদিও এর খরচ তুলনামূলক রুশ ভাষায় পড়াশোনা করার চেয়ে বেশি।
জেনারেল মেডিসিনের উপর এমডি ডিগ্রির সাধারণ সময়সীমা ৬ বছর, তবে রুশ ভাষায় পড়াশোনা করলে তা বেড়ে দাঁড়াবে ৭ বছরে। স্পোর্টস মেডিসিনের ক্ষেত্রেও সময়সীমা একই। তবে ডেন্টালের ক্ষেত্রে এই সময়সীমা ৫ বছর। রাশিয়ার এমডি ডিগ্রি ভারত বা বাংলাদেশের এমবিবিএস ডিগ্রির সমান হিসেবে ধরা হয়।
পড়তে হলে যা যা প্রয়োজন
রাশিয়ায় মেডিকেল পড়তে যাওয়ার অন্যতম বড় সুবিধা হলো এটি পড়তে হলে খুব বেশি কিছুর প্রয়োজন হয় না। অন্যান্য দেশের মতো ভাষার দক্ষতা প্রমাণের জন্য এখানে আইইএলটিএস বা টোয়েফলের দরকার নেই। তাছাড়া এসএটি, জিআরই বা জিম্যাটের মতো পরীক্ষাতেও উত্তীর্ণ হওয়ার প্রয়োজন পড়ে না। মাধ্যমিক পরীক্ষায় পদার্থবিজ্ঞান, রসায়ন ও জীববিজ্ঞান বিষয়ে কমপক্ষে ৫০% মার্কস পেলেই কোনো ছাত্র রাশিয়ার মেডিকেল কলেজে ভর্তির সুযোগ পাবে।
টিউশন ফি এবং অন্যান্য খরচ
রাশিয়ায় মেডিকেল পড়ার অন্যতম বড় সুবিধা হলো এর সাশ্রয়ী টিউশন ফি। মেডিকেল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে বিদেশি ছাত্রদের পড়ালেখার জন্য রাশিয়ার সরকার প্রতিবছরই ৮০-৯০% ভর্তুকি দেয়, অর্থাৎ বিদেশি ছাত্রদেরকে মূলত বাকি ১০-২০% খরচ বহন করতে হয়।
প্রতিষ্ঠানভেদে রাশিয়ার টিউশন ফি ওঠানামা করে। যেমন- ক্রিমিয়ান ফেডারেল ইউনিভার্সিটিতে এমডি ডিগ্রির জন্য পড়াশোনা করার জন্য প্রতিবছরে খরচ হবে ১,৯৫,০০০ রুবল অর্থাৎ ৬ বছরে বাংলাদেশি টাকায় তা হবে ১৫ লক্ষের কিছু বেশি। অন্যদিকে রাজধানী মস্কোর পিরোগভ ন্যাশনাল রিসার্চ মেডিকেল ইউনিভার্সিটিতে পড়তে হলে এ খরচ বেড়ে দাঁড়াবে ৩০ লক্ষ ৮১ হাজার টাকায়।
রাশিয়ায় থাকার খরচও অন্যান্য উন্নত দেশের তুলনায় বেশ কম। প্রতিমাসে গড়ে ২০০ মার্কিন ডলার সমপরিমাণ অর্থ খরচ হবে রাজধানী মস্কোয় থাকতে হলে।
প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস
ডিপার্টমেন্ট অফ ফেডারেল মাইগ্রেশন সার্ভিস অফ দ্য রাশিয়ান ফেডারেশন থেকে ‘ইনভাইটেশন লেটার ফর স্টাডি’ পাওয়ার পর শিক্ষার্থীকে প্রথমেই রাশিয়ার ভিসা পেতে তার দেশের রাশিয়ার দূতাবাসে যেতে হবে। ভিসা পেতে হলে যে যে ডকুমেন্টস প্রয়োজন তা হলো:
- বৈধ পাসপোর্ট - ভিসার জন্য নির্ধারিত সম্পূর্ণ অ্যাপ্লিকেশন ফর্ম - ২টি পাসপোর্ট সাইজের ছবি (৩৫ মি.মি. x ৪৫ মি.মি.) - যে কলেজ/বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী পড়বে, সেই প্রতিষ্ঠানের অ্যাডমিশন লেটার - এইডস সার্টিফিকেট
এছাড়াও রাশিয়ায় থাকাকালীনও কিছু ডকুমেন্টস শিক্ষার্থীকে সবসময় সাথে রাখতে হয়।
- পাসপোর্ট (কমপক্ষে ২ বছরের জন্য বৈধ) - স্টুডেন্ট এন্ট্রি ভিসা - ইমিগ্রেশন কার্ড (বিমানবন্দর থেকেই ছাত্রকে দেওয়া হবে এবং সেখানে বসেই পূরণ করে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ প্রয়োজনীয় সিল দিয়ে দেবে) - মেডিকেল হেলথ সার্টিফিকেট - নেগেটিভ এইডস টেস্ট-এর কার্ড - পাসপোর্ট সাইজের ছবি
রাশিয়ার সেরা মেডিকেল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান
রাশিয়ার আনাচেকানাচে অসংখ্য মেডিকেল প্রতিষ্ঠান থাকলেও কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে সেরা বলে মানা হয়। সেগুলো হলো:
- লোমোনসভ মস্কো স্টেট ইউনিভার্সিটি - রাশিয়ান স্টেট মেডিকেল ইউনিভার্সিটি - ভলগোগ্রাদ স্টেড মেডিকেল ইউনিভার্সিটি - কুর্স্ক স্টেট মেডিকেল ইউনিভার্সিটি - কাজান স্টেট মেডিকেল ইউনিভার্সিটি - পিপল’স ফ্রেন্ডশিপ ইউনিভার্সিটি অফ রাশিয়া, মস্কো
Feature Image: Maven Overseas