বিপুল অর্থ ও প্রতিপত্তির মালিক রিচার্ড ব্র্যানসনের রয়েছে নিজের কেনা দ্বীপ, তিনি ভার্জিনের মতো একটি বৈশ্বিক কোম্পানির প্রধান। ফলে তার মতো একটা জীবন অনেকেরই পরম আরাধ্য বিষয়। তবে মি. ব্র্যানসন কিন্তু একদিনে আজকের এই অবস্থানে এসে পৌঁছাননি। আলাদিনের চেরাগ থেকে দৈত্য বের হয়ে এসেও তার ৩টি ইচ্ছা পূরণ করে দিয়ে যায়নি। এই মানুষটি শারীরিক অসুস্থতার কারণে স্কুল থেকে ঝরে পড়েছিলেন। তবুও প্রবল ইচ্ছাশক্তি এবং স্বপ্নকে বাস্তবায়নের দুর্দমনীয় আকাঙ্ক্ষাই রিচার্ড ব্র্যানসনকে আজকের এ অবস্থানে নিয়ে এসেছে।
আজকের তরুণদের প্রতি রিচার্ড ব্র্যানসনের সবচেয়ে বড় পরামর্শ হলো, জীবনে যত বাধাবিপত্তিই আসুক না কেন, হাল ছেড়ে না দিয়ে সেগুলোর মোকাবেলা করে যেতে হবে। তাহলেই একদিন সফলতা হাতে এসে ধরা দেবে। এর জীবন্ত উদাহরণ হিসেবে আছেন ব্র্যানসন নিজেই। ডিস্লেক্সিয়াতে ভুগে শৈশবটা বেশ দুর্বিসহই কেটেছে তার। এ রোগে আক্রান্ত ব্যক্তির লিখতে-পড়তে-বলতে সমস্যা হয়। তাই পরিচিত কেউই ব্র্যানসনকে নিয়ে খুব বড় কোনো স্বপ্ন দেখেননি। কিন্তু দেখেছিলেন ব্র্যানসন নিজে। এজন্যই আজ তিনি একটি গ্লোবাল মিউজিক ও ভিডিও গেম কোম্পানি, একটি এয়ারলাইন কোম্পানির এবং একটি স্পেস প্রজেক্টের কর্ণধার।
ব্র্যানসনের সাফল্যের গোপন রহস্য
যেসব তরুণ-তরুণী তাদের ক্যারিয়ারের সূচনালগ্নে আছে, তাদের জন্য রিচার্ড ব্র্যানসনের পরামর্শ একটিই, “হাল ছেড়ো না”। ভার্জিনের ওয়েবসাইটে তিনি লিখেছেন,
“আমার ক্যারিয়ারের এমন অনেক সময় এসেছে যখন আমার আইডিয়াগুলোকে ছোট করে দেখা হয়েছে। বন্ধুবান্ধব, পরিবারের সদস্য, পরিচিত লোকজন, ব্যাঙ্ক- এমন অনেকেই সবসময় সেই সম্ভাবনা দেখতে পেত না যা আমি পেতাম। কিন্তু সেসব আমাকে লক্ষ্যচ্যুত করতে পারেনি। কেউ আপনার আইডিয়ার উপর ভরসা করতে না পারার মানে এই নয় যে সেগুলো মূল্যহীন। আমার ক্ষেত্রেও এটা আমাকে সফল হতে আরো বেশি অনুপ্রাণিত করেছে।”
রিচার্ড ব্র্যানসনের মতে, জীবনে সবকিছুরই সেকেন্ড চান্স বলে একটা বিষয় আছে। আর আপনি যদি হাল ছেড়ে সরে আসেন, তাহলে আপনি হয়তো জানতেও পারবেন না যে, দিনশেষে কত বড় একটা অর্জন আপনার জন্য অপেক্ষা করছিল।
এক্ষেত্রে উল্লেখ করা যায়, বিখ্যাত উপন্যাস ‘হ্যারি পটার’ এর লেখিকা জে কে রোলিং এর কথা। তার প্রথম বই ‘হ্যারি পটার এন্ড দ্য ফিলোসফার্স স্টোন’ প্রকাশের আগে তাকে ১২ জন প্রকাশক ফিরিয়ে দিয়েছিলেন। তবুও হতাশ না হয়ে তিনি ছুটে বেড়িয়েছিলেন বলেই আমাদের অনেকের শৈশব এতটা সুন্দর হতে পেরেছিল হ্যারি পটারের সাহচর্যে। টমাস আলভা এডিসন বৈদ্যুতিক বাতি আবিষ্কারের পূর্বে হাজারবার ব্যর্থ হয়েছেন। তিনি যদি সেখানেই হাল ছেড়ে দিতেন, তাহলে হয়তো আমরা আরো অনেকদিন অন্ধকারেই থেকে যেতাম।
নিজের ব্যর্থতা ও ভুলগুলো থেকেও নিয়মিত শিক্ষা নেন ব্র্যানসন। ডিস্লেক্সিয়ার জন্য যখন তাকে স্কুল ছাড়তে হলো, তখন নিজের দুর্ভাগ্যকে মেনে নিয়েই এগিয়ে যেতে পারতেন তিনি। কিন্তু তা না করে বরং সেই দুর্ভাগ্যকে কীভাবে কাজে লাগিয়ে আবার ফিরে আসা যায় সেই সন্ধানে নামলেন ব্র্যানসন। এর ছাপ দেখা যায় তার প্রতিষ্ঠিত কোম্পানি ভার্জিনেও।
তার মতে,
“কেউই একেবারে প্রথমবারের চেষ্টায় সঠিক জিনিসটা পায় না। এভাবেই আমরা আমাদের ভুলগুলো থেকে শিখে থাকি, যেগুলোই ঠিক করে দেয় আমরা কী হতে যাচ্ছি। আমরা সকলেই দ্বিতীয় আরেকবার চেষ্টা করার অধিকার রাখি।”