উদ্যোক্তা হিসেবে আপনাকে খুবই ব্যস্ত সময় পার করতে হবে। তাই সময়ের যাতে সর্বোত্তম ব্যবহার হয়, যাতে কোনোভাবেই আপনার মূল্যবান সময় নষ্ট না হয়, সেদিকে অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে। এর মানে আবার এমনটা না যে, আপনি বন্ধুবান্ধবদের সাথে আড্ডা দেয়া, ঘুরে বেড়ানোর মতো বিষয়গুলোকে ভুলে যাবেন। সেগুলো অবশ্যই করবেন। কিন্তু তারপরেও কিছু ব্যাপারে অবশ্যই সচেতন হতে হবে।
১) সোশ্যাল মিডিয়া
বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়া আমাদের নিত্যদিনের সঙ্গী হয়ে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু এগুলোর মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহার প্রভাব ফেলে আমাদের কর্মজীবনে। বিজনেস টুডের মতে, সোশ্যাল মিডিয়ায় আসক্তি কর্মস্থলে উৎপাদনশীলতা শতকরা ১৩ ভাগ পর্যন্ত কমিয়ে দেয়। সংখ্যাটা যে একেবারেই হেলাফেলা করার মতো না সেটা তো না বললেও চলে। তাই ফেসবুক, টুইটারের মতো সোশ্যাল মিডিয়াগুলোতে একজন উদ্যোক্তার সময় নষ্ট করা কোনোভাবেই কাম্য নয়।
যদি ব্যবসায়িক কোনো কাজে না হয়, তাহলে অফিস চলাকালীন সময়টাতে অন্তত সোশ্যাল মিডিয়া থেকে দূরে থাকুন। দরকারে আপনার স্মার্টফোন থেকে এই অ্যাপগুলো ডিলিট করে দিন, যদি না নেশা কাটাতে পারেন। তাহলে অন্তত সহজেই চ্যাটবক্সে চোখ যাবার চেয়ে নজর থাকবে আপনার কাজের দিকে।
২) পরিকল্পনাহীনতা
প্রতিদিন সঠিক পরিকল্পনা করে সেই অনুযায়ী এগোনোর মতো খুব সহজ একটা কাজ করতেও ভুলে যায় অধিকাংশ মানুষ। অথচ এই কয়েক মিনিটের একটা কাজ করে নিলে সারাদিনের কাজ কী কী হতে পারে সেই সম্পর্কে যেমন ধারণা পাওয়া যেতো, তেমনই সময়টাও নষ্ট হতো না।
প্রতিদিন সকালে উঠেই তাই একটা লিস্ট বানানো উচিত সারাদিন কী কী কাজ করা লাগতে পারে সেই ব্যাপারে। এরপর সেই কাজগুলোকে প্রাধান্য অনুসারে সাজিয়ে কাজে ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে। শুরুতে অবশ্যই তুলনামূলক কঠিন কাজগুলো হাতে নিতে হবে। তাহলে দেখা যাবে দুপুরের মাঝেই আপনার কাজের একটা বড় অংশ শেষ হয়ে গেছে। এরপর যখন গা কিছুটা অবসন্ন হয়ে আসবে, তখন তুলনামূলক সহজ কাজগুলো করতেও তেমন একটা সমস্যা হবে না।
৩) মাল্টিটাস্কিং
মাল্টিটাস্কিং অর্থাৎ একই সময়ে একসাথে অনেকগুলো কাজ করতে যাওয়াটা আসলে বোকামি ছাড়া আর কিছুই না। আর মাল্টিটাস্কিং কথাটা যে কেবলই একটি মিথ- সেটাও অনেকেরই জানা থাকার কথা। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক বিষয় হলো, অনেকে তারপরেও মাল্টিটাস্কিং করারই চেষ্টা করেন।
উদ্যোক্তাদেরকে অবশ্যই এই অভ্যাস থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। একটি নির্দিষ্ট সময়ে কেবলমাত্র একটি নির্দিষ্ট বিষয়ের প্রতিই আপনার দৃষ্টি নিবদ্ধ করা উচিত। নাহলে আপনার কাজের গতি যেমন কমে যাবে, তেমনই বাড়তে পারে বিভিন্ন ধরনের ত্রুটি-বিচ্যুতির আশঙ্কাও।
৪) মিটিং
সত্যি কথা বলতে, অধিকাংশ সময়ই একটি মিটিং আমাদের সময়ের অপচয় ছাড়া তেমন আর কিছুই করে না। এ কথাটা একজন উদ্যোক্তা হিসেবে আপনিও বেশ ভালোভাবেই জানেন।
তাই যেকোনো মিটিংয়ের কথা শুনলেই সেখানে ছুটে যাবার দরকার নেই। কারণ আপনার সময়েরও দাম আছে। প্রথমেই বুঝে নিন, মিটিংয়ে আপনার উপস্থিতি কতটা দরকারি। যদি কেবলমাত্র জানা-শোনার জন্য হয়, তাহলে আপনার কোনো প্রতিনিধিকেই সেখানে পাঠাতে পারেন। আবার চাইলে এই কাজগুলো ইমেইল কিংবা অনলাইন কলের মাধ্যমেই সারা যায়। তাতে করে মূল কাজের দিনই কেবল আপনার গেলে হয়ে যাচ্ছে।
৫) দুশ্চিন্তা করা
চিন্তা-দুশ্চিন্তা; এগুলো সবই আমাদের দৈনন্দিন জীবনের অংশ। একজন উদ্যোক্তাকে তো এগুলো নিয়ে আরো বেশি পড়ে থাকতে হয়। সামনের দিনগুলো কীভাবে চলবে, কর্মচারীদের বেতন কীভাবে আসবে, কীভাবে কর্মপরিসর বাড়ানো যায়, নতুন আর কোথা থেকে বিনিয়োগ আনা যায়- এমন হাজারো চিন্তা সবসময় তার মাথায় ঘুরতেই থাকে।
এসব নিয়ে চিন্তা করা ভালো। তবে সারাক্ষণ এসব নিয়ে চিন্তা করলে সেগুলো অল্পতেই দুশ্চিন্তায় রুপ নেবে। ফলশ্রুতিতে, আপনি আপনার কাজকেই ঠিকমতো এগিয়ে নিতে পারবেন না। তাই দিনের একটি সময় নির্ধারণ করুন, যে সময় বসে বসে ওসব বিষয় নিয়ে পরিকল্পনা করবেন, দুশ্চিন্তা নয়। বাকিটা সময় হাতের সামনে যে কাজ জমে আছে, সেগুলো করার দিকে মনোযোগ দিন।
৬) অতিরিক্ত কাজ
কাজ করা ভালো, তবে অতিরিক্ত কাজ করা আবার ভালো না। এটা আপনাকে দ্রুততার সাথে সামনে এগিয়ে নেয়ার পরিবর্তে বরং বেশ খানিকটা পিছিয়ে দেয়। আজ হয়তো রাত জেগে আপনি অনেক কাজ করলেন, কিন্তু এটা আসলে আপনার গতকাল এগিয়ে নেয়া কাজকে খানিকটা পিছিয়েই দেবে। কারণ অতিরিক্ত রাত্রি জাগরণের ফলে পরদিন সকালে তাড়াতাড়ি ঘুম থেকে উঠে আপনার পক্ষে কর্মস্থলে যাওয়াটা কঠিন হয়ে যাবে। আবার কম ঘুমের ফলে ঘুম ঘুম ভাবের সমস্যাটা তো আছেই। অর্থাৎ, আপনি যদিও ভাবছেন যে, আপনি এগিয়ে রাখছেন কাজটাকে, আসলে আপনি কাজের দিক দিয়ে পিছিয়েই যাচ্ছেন।
কাজ করুন, অসুবিধা নেই, তবে এটাও জানুন যে, কখন কাজ থেকে অবসর নিয়ে কাজের বাইরের জীবন নিয়ে ভাবা দরকার। এই দুইয়ের সমন্বয়ই পারে আপনাকে ঠিকমতো সামনের দিকে এগিয়ে নিতে।
সময় আপনার, এর মূল্যটাও আপনারই হাতে। আজ যদি আপনি সময়কে মূল্য না দেন, তাহলে কাল একে মূল্য দিতে দিতেও কূল পাবেন না। তাই সময় থাকতে সময়ের মর্যাদা দিন। একে অপচয় না করে সঠিকভাবে কাজে লাগান। এতে উপকৃত হবেন আপনি নিজে, বেড়ে উঠতে থাকবে আপনার স্বপ্নের উদ্যোগ।
Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.