Be A Pro

কীভাবে খুঁজবেন পার্ট-টাইম জব বিদেশ-বিভূঁইয়ে

একটা সময় ছিল যখন আমাদের দেশ থেকে বাইরের বিভিন্ন দেশে উচ্চ শিক্ষার জন্য যাওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা ছিল বেশ কম। তবে শিক্ষার হার বৃদ্ধির কারণে এ দেশের মানুষের মাঝে উচ্চশিক্ষা সংক্রান্ত সচেতনতা এবং আগ্রহের পরিবর্তন লক্ষণীয়। তাই পূর্বের তুলনায় এখন অনেক বেশি শিক্ষার্থী উচ্চশিক্ষার জন্য এ দেশ থেকে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে পাড়ি জমাচ্ছেন।

তাদের মাঝে অধিকাংশই সংশ্লিষ্ট দেশ অথবা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রাপ্ত বৃত্তি নিয়ে পড়াশোনা করতে যান। জীবনযাত্রার মান অনেক উন্নত হওয়ার কারণে এসব দেশে বসবাস করা বেশ ব্যয়বহুল। খুব ভালো পরিমাণ অর্থনৈতিক পুঁজি ছাড়া এ দেশ থেকে টাকা পাঠিয়ে ঐসব দেশের খরচ বহন করা প্রায় অসম্ভব। আর তাই এ দেশ থেকে ওখানে গিয়ে শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার পাশাপাশি খুঁজতে হয় নানা পার্ট-টাইম জব।

শুধুমাত্র নিজের থাকা-খাওয়ার খরচ বহন করার জন্যেই যে সবাই পার্ট-টাইম জব করে- বিষয়টি এমন নয়। অনেকে পরিবারকে আর্থিক সমর্থন দেওয়ার জন্য করে থাকে, কেউ আবার ভিন্ন ভিন্ন ক্যারিয়ারের স্বাদ গ্রহণের জন্য পার্ট-টাইম জব করে থাকে, অনেকে আবার ফুল-টাইম জব পাবার আশায় পার্ট-টাইম জব করে থাকে। তবে পেছনের কারণা যা-ই হোক না কেন, পার্ট-টাইম জবে জয়েন করার আগে সকলের অবশ্যই কিছু বিষয় মাথায় রাখা উচিত।

১) নিজের খরচের হিসাব করুন

যদি আপনাকে পার্ট-টাইম জব করতে হয়, তাহলে অবশ্যই আপনাকে নিজের খরচের হিসাব তৈরি করতে হবে। নিজের থাকা-খাওয়া, যাতায়াত, অবসর যাপন, ঘোরাফেরা- সমস্ত খরচের হিসাব তৈরি করুন। মোট খরচের সাথে অতিরিক্ত কিছু খরচ যোগ করে রাখুন। কারণ অনেক সময়েই আমাদের জীবনে বিভিন্ন রকম পরিস্থিতির সৃষ্টি হয় যখন অর্থের প্রয়োজন হয় সবথেকে বেশি। এবার এই খরচ মাথায় রেখে কাজের সন্ধান করুন।

অনেক সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসররা আপনি কত ঘণ্টা অতিরিক্ত কাজ করলেন তার উপর ভিত্তি করে কিছু অতিরিক্ত খরচ সরবরাহ করে থাকেন। সাধারণত আইন, প্রকৌশল এবং প্রোগ্রামিং সম্পর্কিত বিষয়গুলোতে এই ধরনের লোভনীয় সুযোগ বেশি থাকে। এমনটি হওয়া একদমই অস্বাভাবিক না যে আপনি পড়াশোনার পাশাপাশি একটি সফটওয়্যার ফার্মে সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে পার্ট-টাইম জব করছেন এবং বেশ ব্যয়বহুল একটি শহরে স্বাচ্ছন্দে বসবাস করছেন।

অনেক সময় এমন হয়, যে কাজটি আপনি করছেন, সেটি হয়তো স্বল্পবেতনের। তাই নিজের প্যাশন এবং ফুল- টাইম ক্যারিয়ার সম্পর্কিত চাকরি পাওয়া পর্যন্ত চাকরির বেতনকে প্রাধান্য দেওয়া শ্রেয়। অন্যদিকে যদি আপনার কাছে ইতোমধ্যেই এমন চাকরি থাকে যেটি আপনাকে স্বাচ্ছন্দে বসবাস করার জন্য যথেষ্ট অর্থ সরবরাহ করছে, তখন আপনি খুঁজে বের করার চেষ্টা করুন যে ঠিক কোন ধরনের চাকরি করতে আপনি ইচ্ছুক। এভাবে একজন শিক্ষার্থীর ক্যারিয়ারে পার্ট-টাইম জবগুলো ফুল-টাইম জব পেতে ভূমিকা রেখে থাকে।

আবার এমনও হয় যে, শুধু একটি পার্ট-টাইম চাকরি দিয়ে নিজের খরচ বহন করা কষ্টকর হয়ে যায়। সেক্ষেত্রে দুটি পার্ট-টাইম জবও নেওয়া যায়। সেক্ষেত্রে আপনাকে হিসাব করতে হবে দুটি চাকরি থেকে ট্যাক্স দেওয়ার পর আপনার কাছে কী পরিমাণ অর্থ অবশিষ্ট রইলো। একইসাথে আপনাকে সময়ের বিষয়টি মাথায় রাখতে হবে। সপ্তাহে কত ঘণ্টা কাজ আপনি করতে পারবেন সেই সম্পর্কে সঠিক ধারণা না রাখলে আপনাকে শারীরিক এবং মানসিক অবসাদে ভুগতে হবে।

২) চাকরি করুন ডিগ্রির সাথে সামঞ্জস্য রেখে

অনেকে কাজ খুঁজে না পেয়ে হতাশ হয়ে সামনে যে কাজই পান, সেটা করতে শুরু করেন। এতে করে অর্থ উপার্জন হয় ঠিকই, কিন্তু আপনার নিজের কোনো উন্নতি হয় না। একজন প্রকৌশল বিষয়ের শিক্ষার্থী যদি কোনো পণ্যের বিজ্ঞাপন সম্পর্কিত কাজে যুক্ত হন, তাহলে এতে তার নিজের অ্যাকাডেমিক ক্যারিয়ারের কোনো উন্নতি হয় না। অথচ এই শিক্ষার্থী যদি কোনো ইন্ডাস্ট্রি অথবা গবেষণা সংক্রান্ত কাজে যুক্ত হতো, তাহলে সেটি তার ক্যারিয়ারে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলতো।

সেখানে হয়তো সে অনেক নতুন মানুষের সাথে পরিচিত হতো, এসব ইন্ডাস্ট্রির পরিবেশের সাথে পরিচিত হতে পারতো, নিজের স্কিল ডেভেলপমেন্টের জায়গাগুলো খুঁজে বের করতে পারতো– এমন আরও অনেক ক্ষেত্রে সে লাভবান হতো। তাই পার্ট-টাইম চাকরি করার সময় এমনভাবে খোঁজা উচিত যেন তা প্রত্যক্ষ না হলেও অন্তত পরোক্ষভাবে নিজের পড়াশোনার সাথে সংযুক্ত থাকে।

৩) নিজের সময়-পরিকল্পনা মাথায় রেখে কাজ করুন

মনে রাখতে হবে, অর্থপ্রাপ্তির আশায় নিজের আসল কাজ ভুলে যাওয়া যাবে না। যে উদ্দেশ্যে পরিবার ছেড়ে এত দূরে থাকতে হচ্ছে, সেই উদ্দেশ্যকে বৃথা হতে দেওয়া যাবে না। তাই নিজের ক্লাস টাইম, সেমিনার টাইম, লেকচার টাইম, পরীক্ষার জন্য পড়া প্রস্তুত করার সময়– সব কিছু বিবেচনা করে কাজের শিফট নির্ধারণ করতে হবে।

আবার শুধু পড়াশোনার সময় বাদ দিয়ে বাকি সম্পূর্ণ সময় কাজ করতে হবে- এমন মনোভাব থাকলে তা ঝেড়ে ফেলা শ্রেয়। কারণ ঠিক মতো খাওয়াদাওয়ার সময় পাওয়া যাচ্ছে কি না, শরীর পর্যাপ্ত বিশ্রাম পাচ্ছে কি না, সেখানকার মানুষের সাথে পর্যাপ্ত মেলামেশার সুযোগ পাওয়া যাচ্ছে কি না অথবা নিজের মনকে সতেজ রাখার জন্যে পর্যাপ্ত সময় পাওয়া যাচ্ছে কি না- এসব বিষয়ও মাথায় রাখতে হয় ।

ইউরোপ-আমেরিকার এসব দেশের জীবনযাত্রায় অভ্যস্ত হয়ে অনেকেই ওখানে স্থায়ীভাবে বসবাস করা শুরু করেন। সেক্ষেত্রে ফুল-টাইম জব অনেক গুরুত্ব বহন করে। উপরে বর্ণিত এসব ছোটখাট জিনিস মাথায় রেখে জব করলে ফুল-টাইম জব পেতে বেগ পেতে হবে না- এমনটা আশা করাই যায়।

You might also like

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.